এথেন্সেও হাসবে ‘কাস্ত্রোর মেয়েরা’?

২০০৪ অলিম্পিক

উৎপল শুভ্র

২১ জুলাই ২০২১

এথেন্সেও হাসবে ‘কাস্ত্রোর মেয়েরা’?

২০০৪ অলিম্পিকে কিউবাকে খুশি থাকতে হয়েছিল ব্রোঞ্জ পদক নিয়েই। ছবি: গেটি ইমেজেস

সিডনি অলিম্পিকে ফাইনাল খেলেছিল কিউবা-রাশিয়া এবং এই লেখাটা এথেন্স অলিম্পিকে কিউবা-রাশিয়া ম্যাচ নিয়ে। ২০০০ অলিম্পিকের ফাইনালের আগে কে জিতবে তা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি, আলোচনা হয়নি এথেন্সেও। প্রমীলা ভলিবলে কিউবা দলের নাম ‘কাস্ত্রোস্ গার্লস্’ এবং সেই সময়টায় ‘কাস্ত্রোর মেয়েদের’ সামনে এলে নুয়ে পড়তে হতো সবাইকেই। যেমন নুয়ে পড়েছিলেন তালগাছের মতো দেখতে একাতেরিনা গামোভা।

প্রথম প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০০৪। প্রথম আলো

৬ ফুট ৮ ইঞ্চির শরীরটা হঠাৎ করেই যেন ৪ ফুট হয়ে গেল! হাঁটুতে দু হাত রেখে উবু হয়ে হতাশাটা যেন ভুলতে চাইছেন একাতেরিনা গামোভা। একটু দূরে ‘কিউবান গ্যালারি’র সামনে গিয়ে কিউবার খেলোয়াড়দের এমন উল্লাস যে, মনে হতেই পারে সোনা জিতে গেছে তারা। অথচ একটু আগে শেষ হলো মেয়েদের ভলিবলে প্রাথমিক পর্বের এক ম্যাচ।

এথেন্স অলিম্পিকের ভলিবল হচ্ছে যে স্টেডিয়ামে, তার নামটি বড় সুন্দর। পিস অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার। সেই ‘শান্তি আর বন্ধুত্ব কেন্দ্রে’ কিউবা-রাশিয়া ম্যাচটিকে যে ফাইনাল-ফাইনাল একটি আবহ ঘিরে থাকল, তার কারণ আছে। চার বছর আগে সিডনি অলিম্পিকে ফাইনাল খেলেছিল এই দু দলই। সেই ফাইনালের আগে কে জিতবে তা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি। প্রমীলা ভলিবলে কিউবা দলের নাম ‘কাস্ত্রোস্ গার্লস্’ এবং সেই সময়টায় ‘কাস্ত্রোর মেয়েদের’ সামনে এলে নুয়ে পড়তে হতো সবাইকেই। গত পরশু রাতে যেমন নুয়ে পড়লেন তালগাছের মতো দেখতে একাতেরিনা গামোভা।

সিডনিতে চ্যাম্পিয়ন কিউবা, চ্যাম্পিয়ন আটলান্টা আর বার্সেলোনার আগের দুই আসরেও। অলিম্পিকে মেয়েদের ভলিবলে ৫টি সোনা আর ৪টি রুপা মিলিয়ে সফলতম দল সোভিয়েত ইউনিয়নেরও টানা ৩টি অলিম্পকে সোনা জয়ের রেকর্ড নেই। গত শতাব্দীর শেষ দশকটা হাভানা সিগারের বাইরে কিউবার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ছিল বঙ্ংি আর এই ভলিবল। নতুন শতাব্দীর শুরতেই সেই বিজ্ঞাপন ঝাপসা হয়ে যাওয়ার মুখে। দু বছর আগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পঞ্চম হতে হয়েছে, কিউবার জন্য এবারের অলিম্পিক তাই বড় এক পরীক্ষা। সেই পরীক্ষার প্রথম পর্বেই ফেল, জার্মানির বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই পরাজয়, সেটিও প্রথম দুই সেটে জেতার পর। গ্রুপ সোনার আরেক দাবিদার চীন আছে, কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে হলে রাশিয়ার বিপক্ষে জিততেই হতো। এ কারণেই এপিকে রূপ নেওয়া সেই ম্যাচে ২৬-২৪, ১৯-২৫, ২৫-২৭, ২৫-১৯, ১৫-১৩ পয়েন্টে জয়ের পর কিউবানদের অমন বাঁধভাঙা উল্লাস।

ভলিবলে এখন নিয়ম পাল্টেছে। ব্যাডমিন্টনের মতো শুধু সার্ভিস করার সময়ই পয়েন্ট, এই নিয়ম থেকে সরে এসে এখন টেবিল টেনিসের মতো কেউ ভুল করলেই অন্যের পয়েন্ট। ১৫-র বদলে ২৫-এ গেম, ম্যাচ পঞ্চম সেটে গড়ালে সেটি অবশ্য ১৫-তেই। খেলাটা আগের চেয়ে অনেক বেশি গতিময় হয়েছে এতে। ভলিবলে আরেকটি নিয়মও খুব মজার। জিতলে ২ পয়েন্ট, ঠিক আছে। কিন্তু কাউকেই শূন্য হাতে ফেরানো হবে না, এই সিদ্ধান্ত থেকেই কিনা ১ পয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে হারলেও!

ছবি: গেটি ইমেজেস

একাতেরিনা গামোভার কথা দিয়ে শুরুকরেছিলাম। না করে উপায় ছিল না। ভলিবল যখন, জানা কথাই, খেলোয়াড়দের মধ্যে উচ্চতায় একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা হবে। তাই বলে ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি! যখন দু হাত তুলছেন, নেটের সমান হয়ে যাচ্ছে তা। খেলা-টেলা পরে, কোর্টের দিকে তাকালেই তো একাতেরিনা গামোভার ওপর আপনার চোখ আটকে যেতে বাধ্য। তার আশপাশে যেসব খেলোয়াড়দের খুব খাটো দেখাচ্ছিল, খেলোয়াড় তালিকায় চোখ বুলিয়ে দেখি তাদের কারো উচ্চতাই ৬ ফুটের নিচে নয়। ৫ ফুট ১১ ইঞ্চির খেলোয়াড় আছেন দুজন, নইলে রাশিয়ার বাকি সবাই ৬ ফুটের ওপরে। একাতেরিনা গামোভা শুধু তাদের মধ্যেই দীর্ঘতম নন, এবারের অলিম্পিকে মেয়েদের ভলিবলে তিনিই ‘উচ্চতার রানী’। 

কিউবানরা সেদিক থেকে পিছিয়ে। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি আছেন দুজন, ৬ ফুটও দুজন, দলের বাকি ৮ জনই ৬ ফুটের নিচে। তবে উচ্চতাই যে সব নয়, শুধু ম্যাচের ফলই প্রমাণ দিচ্ছে। সেটিই একমাত্র প্রমাণ নয়। স্পাইক (বাংলাদেশে গ্রামে-গঞ্জে যেটিকে ‘ডাউন’ বলে, ‘স্ম্যাশ’ নামেও পরিচিত) বা ব্লক করার সময় একজন খেলোয়াড় লাফিয়ে সর্বোচ্চ কতটা উচ্চতায় উঠতে পারেন, খেলোয়াড় তালিকার সঙ্গেই দেওয়া আছে সেই পরিসংখ্যান। সেই পরিসংখ্যান জানাচ্ছে ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার গামোভা একাতেরিনা স্পাইক করার সময় যেখানে ৩২১ সেন্টিমিটার লাফান, ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার কিউবান ফার্নান্দেজ বারোজ লাফান ৩২৮ সেন্টিমিটার। এমনকি ৫ ফুট ১০ ইঞ্চির দুই কিউবান লুয়াচেস রুইজ আর চারো ওর্টিজও গামোভার চেয়ে বেশি (৩২৬ সেমি)।

‘কাস্ত্রোর মেয়েদের’ ভলিবলে অন্য একটা সৌন্দর্য আছে। কোচদের মুখে একটা কথা নাকি খুবই শোনা যায়, ‘দেখার জন্য এমন দল আর হয় না, শুধু উল্টো দিকে আমার দল না থাকলেই হলো!’ ম্যাচের পুরোটা সময় রুশ কোচ নিকোলাই কারপল যেভাবে হাত-পা ছুড়লেন, এ কথার মর্মার্থটা ভালোই বোঝা গেল তাতে। সে তুলনায় অনেক বেশি স্থিতধী দেখাল কিউবান কোচকে। নাম লুই ফেলিপ কালডেরন। লুই ফেলিপে স্কলারির আত্মীয়?

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×